কবির বিন আনোয়ার এখন কোথায়?

কবির বিন আনোয়ার এখন কোথায়?

প্রশাসন বিভাগের একজন ক্যাডার- যার আগাগোড়াই মিথ্যা আর অন্যায় দিয়ে প্রতিষ্ঠিত- তিনিই হলেন কবির বিন আনোয়ার। মাত্র ১৯ দিনের জন্য কেবিনেট সেক্রেটারী হয়ে যিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর ওপর তার নজিরবিহীন প্রভাব দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি কবির বিন আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে তিনি ছিলেন মাত্র ১৯ দিন। এরপর তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়েছিল।

তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তিনি রাজনীতি করেছেন এই যুক্তিতে তিনি শেখ হাসিনারও আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।

নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন কবির বিন আনোয়ার। অথচ এখন জানা যাচ্ছে, ঢাবিতে তিনি লেখাপড়াই করেননি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে পরিচিতি পেলেও দাপট ছিল সব মন্ত্রণালয়েই।

মায়ের নামে ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’ খুলে নীরব চাঁদাবাজি আর ঘুস বাণিজ্যের হাট বসিয়েছিলেন। বিদেশি সাহায্যের নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের নামে। ‘তূর্য’ নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেছিলেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি।

২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এগুলো সবই আমলাতন্ত্রের ইতিহাসে ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।

সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে একাধিকবার তার চলাচলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি কাছে টানতেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন তার আত্মীয়স্বজনদের ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন কবির বিন আনোয়ার। তাদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

সরকারী চাকুরি ছেড়ে অবসরে যাওয়ার পরপরই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল প্ল্যানার বা সমন্বয়ক ছিলেন সাবেক সচিব এইচটি ইমাম। অবসরের পর কবির বিন আনোয়ারকে ঠিক এই দায়িত্বই দেওয়া হয়। কবির বিন আনোয়ার এই দায়িত্ব নিতে যখন ধানমন্ডি কার্যালয়ে যান, তখন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে তাকে বরণ করে নেন। এই ছবি তখন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। 

ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে অন্য অনেকের মতো আত্মগোপন করেছেন কবির বিন আনোয়ারও। আবার তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলেও শোনা গেছে। এরইমধ্যে সিরাজগঞ্জে দুই বিএনপি কর্মী ও একজন যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় পৃথক তিন মামলায় আসামিও হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আমরা আমলা নামের এই ক্রিমিনালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
#news
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url